S.I | Topic Name | Details | Date |
---|---|---|---|
1 | Technology | Nano Technology full details | 18 September 2020 |
ভবিষ্যৎ থাকবে ন্যানোটেকনেজির হাতে!
আমরা হয়তো ধারণাও করতে পারবো না যে, আমাদের চোখ দেখতে পারে না এমন জিনিস পুরো পৃথিবী জুড়ে আছে।
আর এই বিশ্বকে বলা হয় অাণুবীক্ষণিক বিশ্ব।
এই আণুবীক্ষণিক বিশ্ব খুবই আকর্ষনীয় এবং মজাদার। সম্ভাবনার দুয়ার খুলে রাখা আছে এই আণুবীক্ষণিক বিশ্বে।
বর্তমান সময় টেকনোলজির সময়।
প্রতিনিয়তই কোনো না কোনো টেকনোলজি আমাদের হাতে আসছে।
এবার আসল কথায় আসা যাক।
ন্যানোটেকনোলজি আসলে কি?
ন্যানোটেকনোলজির সঙ্গা এভাবে দেওয়া যেতে পারে যে, ন্যানোটেকনোলজি বা ন্যানোপ্রযুক্তি হলো অতিক্ষুদ্র ডিভাইস তৈরীর জন্য ধাতব ও বস্তুকে সুনিপুণভাবে কাজে লাগানোর বিজ্ঞান।
সংক্ষেপে একে ন্যানোটেক বলা হয় ।
আমেরিকার পদার্থ বিজ্ঞানী রিচার্ড ফেম্যান ১৯৫৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর "There’s plenty of room at the Bottom" আলোচনায় ন্যানোটেকনলজি সম্পর্কে সর্বপ্রথম ধারণা দেন।
১০০ ন্যানোমিটার থেকে ছোট পার্টিকেলে এই ন্যানোটেকনোলজি কাজ করে।
যদিও ন্যানোটেকনোলজি ক্ষুদ্র আকারের পার্টিকেলের উপর কাজ করে কিন্তু ন্যানোটেকনোলজি দ্বারা তৈরিকৃত জিনিসের ক্ষমতা অনেক বেশি।
ন্যানোটেক দ্বারা তৈরিকৃত জিনিসগুলো আকারে ছোট, ওজনে হালকা, দামে তুলনামূলক সস্তা হয়।
ন্যানােটেকনলজি খুব ছােট্ট আকারের হয়ে থাকে , অর্থাৎ একটি মাত্রায় ১০০ ন্যানােমিটার থেকেও ছােট ।
আরও সহজ ভাবে বলে গেলে , ন্যানােমিটার থেকেও ছােট টেকনােলজিকে ন্যানােটেকনলজি বলে।
ন্যানোটেকনলজি পদার্থকে আণবিক পর্যায়ে পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণ করবার বিদ্যা।
আসলে এই ন্যানো কি?
একটি উদাহরণ দিলে ভালো হবে। আমরা যে কলম দিয়ে লিখি বা দাগ দেই।
আপনি কি জানেন আমরা কলম দিয়ে যে দাগ দেই তার প্রস্হ প্রায় মিলিয়ন ন্যানোমিটার?
তাহলে চিন্তা করুন ন্যানোটেকনোলজি কত ক্ষুদ্র পরিসরে কাজ করে।
ন্যানো হলো পরিমাপের একক।
এক মিটারের এক কোটি ভাগের এক ভাগকে বলা হয় এক ন্যানোমিটার।
আর ন্যানোটেকনোলজি হলো বিজ্ঞানের অতি ক্ষুদ্র স্তরে একটা কিছু তৈরি করা।
ভবিষ্যতে আমাদের এই পৃথিবী হতে যাচ্ছে ন্যানোটেকনোলজির রাজত্ব।
ন্যানোটেক কেন গুরুত্বপূর্ণ?
আমরা সকলেই জানি পৃথিবীর সব কিছু, মানুষ, গাছপালা,পরিবেশ,মহাকাশ সবকিছুই পরমাণু দিয়ে তৈরী।
এই যে আমরা সুস্বাদু খাবার খাচ্ছি, সুন্দর প্রকৃতি দেখছি এগুলো সবই বাস্তবে কণা মাত্র।
সবকিছুর মূলে রয়েছে কোটি কোটি পরমাণু।
কিন্তু পরমাণু এত ছোট যা খালি চোখে দেখা যায় না।
ন্যানো টেকনোলজিকে বাস্তবে রুপায়িত করা সম্ভব হয়েছে আইবিএমের তৈরী করা STM (Scanning Tunneling Microscope) যন্ত্রটির আবিষ্কারের ফলেই। এটি আবিষ্কৃত হয় ১৯৮০ সালে।
এই যন্ত্রটি এতই শক্তিশালী যে এটি দিয়ে অণুর গঠন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে।
এ যন্ত্রে একটি ছোটখাটো পিঁপড়া দেখতে মনে হবে একটি বিশাল আকারের ডাইনোসরের মত।
বড় কথা হলো এই ন্যানোটেকনোজিতেই পদার্থের সবকিছু বদলে দেওয়া সম্ভব।
ভবিষ্যতে বিজ্ঞান আমাদের পৃথিবীকে নতুন আকার দিতে পারে এ ন্যানোটেকনোলজি দিয়েই।
এটা অসম্ভব কিছু না।
কারণ আমাদের বিজ্ঞান যেভাবে এগাচ্ছে তাতে এটা আশা করা যেতেই পারে।
ন্যানোটেক এর মাধ্যমে আমাদের জীবন কেমন হবে?
ন্যানোটেকনোজির মূল লক্ষই হচ্ছে মানুষের জীবনকে আরো সহজ করে তোলা।
সত্যি বলতে কি ন্যানোটেকনোলজি ইতিমধ্যেই আমাদের জীবনকে আরও সহজ করে দিয়েছে।
কিভাবে?
যেমনঃ
ক.
মেডিসিন ( সুস্থ কোষগুলোকে কোনোপ্রকার ক্ষতি না করেই ক্যান্সার কোষকে হত্যা করে থাকে),
খ.
কম্পিউটারিং (সুপার AI ব্যবহার করে কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরী করা হয়েছে)
গ.
যোগাযোগে ও মহাকাশযাত্রার অসাধারণ অগ্রগতি হয়েছে।
ন্যানোটেকনোলজির ক্ষেত্রে দুটি প্রক্রিয়া লক্ষ করা যায়।
i. উপর থেকে নিচে বা Top to Bottom
ii. নিচ থেকে উপরে বা Bottom to Top.
Top to Bottom বা উপর থেকে নিচ পদ্ধতিতে যেকোন জিনিসকে আরো ছোট আকার দেওয়া হয়।
আর Bottom to Top হলো এর সম্পূর্ণ উল্টো অর্থাৎ ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্র আকারের জিনিস দিয়ে আরো বড় আকারের জিনিস তৈরি করা।
আমরা বর্তমানে Top to Bottom প্রযুক্তিতে আছি।
ন্যানোটেকনোলজি মাধ্যমে অনেক কিছুই বদলে ফেলা সম্ভব। যেমনঃ যেকোন পদার্থের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক, বিদ্যুৎ ও চৌম্বক পরিবাহিকতা, রাসায়নিক বিক্রিয়াসহ অনেক কিছু।
ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করে পানিকে আর্সেনিক মুক্ত করা সম্ভব এবং সমুদ্রের লবণাক্ত পানি যেগুলা পানযোগ্য নয় সেগুলোর লবণাক্ততা দূর করে পানযোগ্য করা সম্ভব।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন,ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে সুপেয় পানির খুব অভাব দেখা দিবে।
মানুষের প্রতিনিয়ত দূষণের ফলে নদী নালা সব দূষিত হয়ে যাবে,পানির স্তর একেবারেই নিচে নেমে যাবে।
মানুষের মধ্যে দেখা দিবে নানা রোগবালাই।
ধারণা করা হচ্ছে আমাদের খাদ্যাভাস বদলে দিবে এই ন্যানোটেক।
খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করে পুষ্টিগুণ বাড়িয়ে আরোও স্বাস্থ্যসম্মত করবে এই ন্যানোটেকনোলজি।
আমি যদি বলি আমরা ন্যানোটেকনোজির ব্যবহার শুরু করেছি অনেক আগে থেকেই, তাহলে কি আপনি বিশ্বাস করবেন?
একটু ভাবুন ত, আমরা যখন প্রথম কম্পিউটার আবিষ্কার করি তখন এর আকার কত বড় ছিল?
তখন কি কেউ চিন্তা করতে পেরেছিল একদিন এই কম্পিউটার মানুষের পকেটে থাকবে?
আপনি জানলে আরো অবাক হবেন যে, আগে ওই বিশাল কম্পিউটার দিয়ে সামান্য কিছু হিসাব করা যেত।
আমাদের প্রযুক্তিকে আরে শক্তিশালী ও ছোট করেছে এই ন্যানোটেকনোলজি।
আমাদের কম্পিউটারের যে প্রসেসর আছে সেটা হলো ন্যানোটেকনোলজির সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
ন্যানোটেকেনোলজির কারনে একটি কম্পিউটারের প্রসেসরে প্রায় দুই বিলিয়ন ট্রানজিস্টর সহজেই এঁটে যায়। ভাবুন তাহলে আমরা কত দ্রুত আগাচ্ছি।
চলুন দেখি ন্যানোটেকনোলজির সুবিধাগুলো কি কিঃ
১. দূষিত বা লবণাক্ত পানি বিশুদ্ধকরণে ন্যানোম্যাটেরিয়ালসমুহ ব্যবহার করা যায়।
২. মেটাল অক্সাইড ন্যানো ওয়ারসমূহকে ক্যামিকাল সেন্সর হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
৩. সেলফ অ্যাসেম্বম্লিং ক্ষমতা সম্পন্ন।
৪. ইলেকট্রনিক বায়োসেন্সরসমূহের ফেব্রিকেশন করা যায়।
৫. পণ্যের ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘ স্থায়িত্ব প্রদান করে।
ন্যানোপ্রযুক্তির অনেক ক্ষতিকর দিকও রেয়েছে।
১। ন্যানোটেকনোলজি হচ্ছে নতুন। তাই এর বর্তমানে গবেষণা ও প্রয়োগ অনেক ব্যয় সাপেক্ষ।
২। এ প্রযুক্তির বহুল ব্যবহারের ফলে অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়বে।
৩। অনেক ন্যানোপ্রোডাক্ট মানুষের মস্তিষ্ক ও ফুসফুসের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
৪। ন্যানেপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মারাত্মক যুদ্ধাস্ত্র তৈরী করা সম্ভব বিধায় যুদ্ধক্ষেত্রে আরো ভয়াবহার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
৫। ন্যানোপ্রযুক্তির ব্যবহার অন্যান্য প্রাণীর জন্য মারাত্মক হতে পারে।
৬। এখানে কোন ভুল হলে তা মারাত্মক ক্ষতি করে ফেলতে পারে।
সুতরাং বলাই যায়, ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে রাজত্ব করবে ন্যানোটেকনোলজি।